ডেস্ক : নাম রাইসা (ছদ্মনাম), বাড়ি
পঞ্চগড় জেলাতে। ঢাকা এসেছিলেন পড়তে। কিন্তু ঢাকার শোবিজের ঝলকানি তাকে
পড়ালেখায় নয়, উৎসাহিত করেছে মডেলিংয়ে। অনেক চেষ্টায় দুই একটি মিউজিক
ভিডিও, দুটি সিনেমাতে সহ-অভিনেত্রীর চরিত্রে অভিনয় জুটেছে কপালে। আর সেই
এতটুকু প্রাপ্তিতেই নিজের নামের পাশে অ্যাকট্রেস যোগ করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন
গুলশান-বনানী আর ধানমন্ডির তথাকথিত উচ্চস্তরে। রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে
প্রশাসনের লোক- কে নেই তার বন্ধু তালিকায়! এই তালিকাতে এখন যোগ হয়েছে
সদ্য নাম কামানো বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারও। রাইসার গ্রামের বাড়িতে
এখনও ঠিক মতো খাওয়া না জুটলেও ঐসব বন্ধুদের কল্যাণে প্রতিদিন তার খাওয়া
হচ্ছে অভিজাত রেস্তরাঁতে। রূপের সঙ্গে প্রভাব-প্রতিপত্তি কোন কিছুরই অভাব
নেই এই সি গ্রেডের মডেল ও অ্যাকট্রেসের। এমনই নামসর্বস্ব মডেলরা এখন
মায়াজাল ছড়িয়ে চষে বেড়াচ্ছে ঢাকার শোবিজ এরিয়া। তবে এখন তাদের সহজেই অর্থ
উপার্জনের অন্যতম শিকারের নাম উঠতি ক্রিকেটার। শুধু উঠতি ক্রিকেটাররাই নয়,
জাতীয় দলে খেলেছেন এমন কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটারকেও এই ধরনের
মডেলদের বন্ধু তালিকায় দেখা যায়। তাদের নিয়ে ধানমন্ডি লেক, গুলশানের
নামীদামি রেস্তরাঁ, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি- এমনকি বিদেশ ভ্রমণের ঘটনাও
প্রতিনিয়ত। অভিযোগ রয়েছে জাতীয় দলের এক তারকা ক্রিকেটার এমনই একজন সি
গ্রেডের মডেলের সঙ্গে লিভ টুগেদার করেছেন লালমাটিয়ার একটি ফ্ল্যাটে। রংপুর
বিভাগের এক সাড়া জাগানো ক্রিকেটার ফর্ম হারিয়ে এখন মাঠের বাইরে। এই
ঘটনাগুলো এখন আড়াল থেকে প্রকাশ্যে এসেছে। বিশেষ করে জাতীয় দলের তারকা পেসার
রুবেল হোসেনের বিরুদ্ধে এক অভিনেত্রীর ধর্ষণ মামলার পর।
অনূর্ধ্ব-১৯, এ দল ও বিভিন্ন লীগ
চলাকালে দূরদূরান্ত থেকে ঢাকায় বড় ক্রিকেটার হতে ছুটে আসেন অনেক তরুণ।
খেলার জন্য তাদের আশ্রয় নিতে হয় বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের বাসায় কিংবা মেসে।
আবার এক সঙ্গে অনেকেই ঢাকাতে বাসা নিয়ে থাকেন। কিন্তু এই সব তরুণ বড়
ক্রিকেটার হওয়ার আগেই নিজেদেরকে ধরে রাখতে পারছে না নৈতিকতার বাঁধনে। জড়িয়ে
পড়ছেন এইসব সি গ্রেডের মডেলদের জালে। অল্প কিছু দিন আগেই জাতীয় দলের সদ্য
সুযোগ পাওয়া ক্রিকেটারের সঙ্গে ছবি তুলে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন এক সি গ্রেডের
মডেল। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই তরুণ ক্রিকেটার এই ছবি দেখে বিব্রতকর
পরিস্থিতিতে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আসলে আমার সঙ্গে ফ্যান হিসেবে পরিচয় করিয়ে
দিয়েছিল আরেক বন্ধু। তারপর সে আমার বন্ধু হতে চায়। পড়ে ফেসবুকে বেশ কিছুদিন
চ্যাটিংয়ের পর ধানমন্ডিতে আসতে বলে। সেখানে ফ্যান হিসেবেই সে বেশকিছু ছবি
আমার সঙ্গে তোলে। পরে সেই ছবি ছড়িয়ে দেয় ফেসবুকে। তবে শেষ পর্যন্ত আমার
অন্য বন্ধুদের চাপে সে সেই ছবি ফেসবুক থেকে সরিয়ে দেয়।’
কিন্তু এমন প্রতারণার শিকার অনেক
ক্রিকেটারই মান-সম্মানের ভয়ে মুখ খোলেননি। প্রতিনিয়ত এই সব সি-গ্রেডের
মডেলরা ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁদ পেতে রাখে উঠতি আর
তারকা ক্রিকেটারদের জন্য। আর সেই ফাঁদে খুব সহজেই ধরা দেন উঠতি
ক্রিকেটাররা। এই ক্রিকেটার আর সি গ্রেডের মডেলদের বেশির ভাগকেই দেখা যায়
ধানমন্ডি-৮ নম্বর লেক, রবীন্দ্র সরণি, গুলশান কেএফসি, পিজাহাটে। এছাড়াও সময়
কাটাতে চলে যান কক্সবাজার ও সিলেটের বিভিন্ন হোটেলে। ক্রিকেট খেলে আয়ের বড়
অংশটাই উঠতি ক্রিকেটাররা ব্যয় করেন এইসব সি- গ্রেডের মডেলদের পেছনে। একটু
পরিচিত ক্রিকেটাররা অবশ্য এতটা খোলামেলা ভাবে ঘুরে বেড়ান না। তাদের আড্ডা
হয় নিজের অথবা বন্ধুদের ফ্ল্যাটে। জাতীয় দলের ক্রিকেটার রুবেল হোসেনের
বিপক্ষে অভিযোগেও এই সব বিষয়ে সত্যতার অনেকটা প্রমাণ মেলে। রুবেলের
বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ‘রুবেলের সঙ্গে পরিচয়ের তিন মাসের মধ্যেই ও
আমাকে ওর বাসায় নিয়ে যায়। সেখানেই ও আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে। তবে ও
যখন আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো তখন আমি একদিন রাত সাড়ে ১২টায় ওর
বাসায় যাই। সেখানে আমি গিয়ে দেখি ওর সঙ্গে আরও দুটি মেয়ে। রুবেল সহ তিন জনই
মাতাল।’
উঠতি ও কিছু তারকা খেতাবধারী ক্রিকেটারের
নামে এমন অভিযোগ অবশ্য আগেও ছিল। তবে ধীরে ধীরে বিষয়গুলো এখন প্রকাশ্যে
আসতে শুরু করেছে। তবে এই জন্য দায়ী অবশ্য সেই সি গ্রেডের উঠতি মডেলরাই।
কারণ তাদের অর্থ রোজগারের অন্যতম ভরসা এখন এই সব উঠতি ক্রিকেটার, যারা
নীতি- নৈতিকতা হারিয়ে সহজেই ধরা পড়েন এই সব মডেলদের খপ্পরে।